February 12, 2010

আসছে ফ্লাইং সসারের মতো নতুন হাইটেক আকাশযান

ফ্লাইংসসার আমাদের সকলের কাছে রহস্য আর আকর্ষনীয় এক নাম। যদি বলি আপনিও অচিরেই একটি ফ্লাইংসসার এর মালিক হতে যাচ্ছেন তাহলে কি অবাক হবেন?  প্রিয় পাঠক অবাক হবার কিছু নেই। আধুনিক বিজ্ঞান আপনার জন্য তৈরী করেছে এ আকাশযান। বাজারে আসার অপেক্ষা করতে করতে চলুন জেনে নেই এই ইউএভি সম্পর্কে।

ইউএভি এর ফুল মিনিং হলো-আনম্যানড্ এরিয়াল ভেহিক্ল। ইউ এ ভি বলতে আকাশে চলে এমন ধরণের যানবাহনকে বোঝায়। ইউএভি এর নাম শুনলে প্রত্যেকের মনে প্রথম ডানাওয়ালা আকাশযান - উড়োজাহাজের ছবি ভেসে ওঠে। এ ধরনের পরিচিত ডিজাইনে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেগুলো হলো-
>> ডানাওয়ালা যানবাহন গুলোর টেকঅফ করার জন্য একটি বিশাল রানওয়ে অবশ্যই লাগে। যেগুলো খাড়াভাবে টেকঅফ এবং ল্যান্ড করতে পারে সেসব এরিয়াল ভেহিকলকে বলা হয় ভিটিওএল (ভার্টিকাল টেকঅফ এন্ড ল্যান্ডিং)। এই ধরণের ইউএভি গুলোর প্রধান সমস্যা হল- এগুলোতে হেলিকপ্টারেরর মতো রোটর থাকা লাগবে যা টেকঅফ এবং ল্যান্ড করার সময় খুব জোর শব্দ সৃষ্টি করবে।
>> এগুলো বাতাসে ভেসে থাকতে পারে না।
>> বিকট শব্দের কারণে এসব যানবাহনগুলোকে কৌশলী কোন গোপন কাজে লাগানো যায় না।
>> এগুলোর ধারণক্ষমতা খুব কম।

এতসব সমস্যার দিকে নজর রেখে যুক্তরাজ্যের এইএসআইআর কোম্পানি সম্পূর্ণ নতুন এক ধরণের ভিটিওএল তৈরি করেছে যাতে কোন ডানা বা রোটর থকবে না। নিশ্চয়ই মনে এখন প্রশ্ন জাগছে ডানা বা রোটর না থাকলে এগুলো চলবে কিভাবে? সেই উত্তর এখন দেব।

কোআন্ডা ইফেক্টের নাম হয়তো অনেকেই শুনেছেন। যারা শোনেননি বা বোঝেননি তাদের জন্য বলছি- কল্পনা করুন একটি জ্বলন্ত মোমবাতির সামনে বা পাশে একটি টিনের ক্যান রাখা আছে। কোনভাবে সেই ক্যানটির দিকে যদি বাতাস প্রবাহিত করানো যায়, ক্যানটির চারপাশ দিয়ে খুব জোরে বাতাসের প্রবাহ সৃষ্টি হবে যা মোমবাতির আলোকে পর্যন্ত নিভিয়ে দিবে। ছোট্ট এই ব্যাপারটি কোআন্ডা ইফেক্ট নামে পরিচিত। পা চালিত সাবমেরিন এই তথ্যের ভিত্তিতে বানানো। এতে বাতাসের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় ফ্লুইড জেট যা সাবমেরিনের ভিতরের কোন তলে খুব জোরে আঘাত করবে এবং এর ফলে শক্তি উৎপন্ন হবে। নবনির্মিত ভিটিওএল ইউএভি এই সূত্রের ভিত্তিতে বানানো। এক্ষেত্রে ফ্লুইড জেট হিসেবে লিকুইড বা গ্যাস ব্যবহার করা হবে।

ডিজাইন
এ ধরনের ইউএভি এর ভিতরে একটি প্রকোষ্ঠে একটি ফ্যান থাকবে (রোটর নয়) যা বাতাসের বেগ সৃষ্টি করবে। অতঃপর তা একটি নির্গম পথের সাহায্যে আরেক প্রকোষ্ঠে নিয়ে একটি বাকানো তলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত করানো হবে। ফ্যান থেকে সৃষ্ট এই বাতাসের ঘনত্ব, ভর এবং বেগের উপর ইউএভি এর টেকঅফ এবং ল্যান্ডিং নির্ভর করছে। এই ক্র্যাফ্টের ওজন কমাতে এবং এর স্থায়ীত্ব বাড়াতে কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। ভিতরের ফ্যানটি ঘোরা শুরু করলে ইউএভিটি ফ্যানের ঘোরার বিপরীত দিক থেকে ঘোরা শুরু করবে। এই সমস্যা এড়ানোর জন্য ক্র্যাফ্টির বাইরের দিকে বেশ কিছু ছোট ছোট ফ্যান লাগানো থাকবে। এই ক্র্যাফ্টির লিফটিং সারফেসে মুভএবল ফ্ল্যাপ লাগানো থাকবে যার সাহায্যে এটি ডানে-বামে ঘুরতে পারবে। ক্র্যাফ্টের বাইরের দিকের ফ্ল্যাপগুলো বায়ুপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করবে।

এইএসআইআর কোম্পানি তাদের এই নতুন ধরণের ইউএভি সম্পর্কে বলছে-
>> তাদের এই ধরণের ডিজাইনের সারভেইল্যান্স প্ল্যাটফর্মের মতো সহজাত স্থায়ীত্ব রয়েছে।
>> এটি বাতাসে অনেকক্ষণ পর্যন্ত ভেসে থাকতে পারবে।
>> সম আকারের প্রচলিত আকাশযানের তুলনায় এর পে-লোড ক্যাপাসিটি অনেক বেশি।
>> “প্ল্যাগ এন্ড প্লে” পে-লোড ব্যবহার করে এটি যাতে ফ্লেক্সিব্ল হতে পারে এমন করে ডিজাইন করা হয়েছে।
>> ভূমি, বিল্ডিং বা যেকোন স্থির জিনিসের সাথে লো স্পিড সংঘর্ষের পরেও এটি টিকে থাকতে পারবে।

রেঞ্জ
এইএসআইআ- এর ক্র্যাফ্টরেঞ্জ অনুসারে-
>> ৩০০ মিলিমিটার ডায়ামিটারের ক্র্যাফ্টের নাম ভিডার ( ভিআইডিএআর )। এর পে-লোড ক্যাপাসিটি ১০০ গ্রাম।
>> ১ মিটার ডায়ামিটারের ক্র্যাফ্টের নাম ওডিন ( ওডিআইএন )। এর পে-লোড ক্যাপাসিটি ১০ কেজি।
>> হোডার (এইচওডিইআর )একটি মাল্টি ইঞ্জিন ক্র্যাফ্ট যার ক্যাপাসিটি এক টন।

ভিডার হচ্ছে হাইলি পোর্টেবল ক্র্যাফ্ট। এটির ডিজাইন কোন বিল্ডিং বা এমন কোন বদ্ধ জায়গায় সার্ভেইল্যান্স বা অবস্থাগত তৎপরতার জন্য। এর লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারীচালিত ইলেকট্রিক এঞ্জিন ১৫ মিনিটেরও বেশি সময় একে উড়তে সাহায্য করবে। এর ওজন প্রায় ৪০০ গ্রাম এবং এটি ১০০ গ্রাম পরিমাণ লোড বহন করতে পারবে।

ওডিন জেপ-এইট জেট ফুয়েল দ্বারা চালিত ওয়াঙ্কল রোটারি ইন্টারনাল কমবাসশান ইঞ্জিন দ্বারা গঠিত। ওজন প্রায় ১০ কেজি। এটি ১ ঘন্টার জন্য প্রায় ১০ কেজি পরিমাণ লোড বহন করতে পারবে। এতে আরো থাকবে অটোনমাস ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম। এটিকে ইন্টেলিজেন্ট, সার্ভেইল্যান্স, টার্গেট অবজার্ভেশন এবং রিকনেইসেনস ( আই এস টি এ আর ) এর মতো কাজে লাগানো যাবে। এছাড়াও কমিউনিকেশন রিলে এবং ইলেকট্রোনিক ওয়ারফেয়ার, আই ই ডি ডিটেকশন, ওয়েপন বা লয়টারিং মিবুনিশনের কাজেও এটিকে লাগানো যাবে।

হুডার একটি হেভি লিফ্ট ক্র্যাফ্ট যার ওজন প্রায় ১.৫ টন এবং এটি ৮ ঘন্টার জন্য ১ টন পরিমাণ কার্গো বহন করতে পারবে। এটি মূলত কার্গো ট্রান্সপোর্টের জন্য তৈরি। হুডার এখন উন্নতির প্রাথমিক পর্যায়ে অবস্থান করছে। এ ই এস আই আর খুব শীঘ্রই এটিকে মাল্টি ইঞ্জিনে পরিণত করতে যাচ্ছে।

প্রথম প্রকাশঃ মাসিক টেকনোলজি টুডে জানুয়ারী ২০১০

No comments:

Post a Comment