February 4, 2010

মুভি রিভিউঃ এভাটার

আপনি যদি পৃথিবী নামক এই গ্রহের বাসিন্দা হয়ে থাকেন আর পেপার,ইন্টারনেট,টিভি বা রেডিও নামক বস্তুগুলা যদি আপনার পরিচিত হয়ে থাকে তাহলে আপনি যেইখানেই থাকুন না কেন এভাটার নামক একটা জিনিসের সাথে বোধকরি আপনার পরিচয় হয়ে গিয়েছে।টার্মিনেটর,এলিয়েন,টাইটানিক খ্যাত পরিচালক জেমস ক্যামেরন দীর্ঘ ১২ বছর বিরতি দিয়ে ২০০৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর এভাটার নামক সিনেমা মুক্তি দিয়ে দিশ্ববাসীকে আবারো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।শুধু তাই নয়।গত ৪ দিনেই বিশ্বব্যাপী মুভিটি আয় করেছে ২০৭০ মিলিয়ন ডলার যা কিনা এযাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।টাইটানিকও এখন ২ নাম্বারে চলে গেছে।তাবত বিশ্বের মানুষ হতবাক হয়ে এই মুভি দেখছে।আমরা পিছিয়ে নেই খুব একটা।ইন্টারনেটের কল্যাণে আমাদের কম্পিউটারের পর্দাতেও পৌছে গেছে এই মুভি।কিন্তু কি এমন আছে এতে?
প্রথম কথা মুভিটার টুডির পাশাপাশি থ্রিডি ভার্সনও উন্নত বিশ্বে রিলিজ হয়েছে। এ্ভাটারে প্রয়োগ করা হয়েছে কম্পিউটার বিজ্ঞানের এনিমেশন বিভাগের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। শুধু ছবির কাহিনী নয় এটার প্রতিটা অঙ্গে অঙ্গে জড়িয়ে আছে রূপকথা।পার্থক্য হচ্ছে শুধু একটা দুইটা উদ্ভট জীবজন্তু দেখিয়ে থেকে যাননি পরিচালক জেমস ক্যামেরুন।তিনি তৈরি করেছেন আলাদা এক পৃথিবী,প্যান্ডোরা;সেখানকার অধিবাসী,না’ভি;তৈরি করেছেন তাদের আলাদা ভাষা(১০০০ শব্দের),ভিন্ন সংস্কৃতি, পরিবেশ, গাছপালা, জীব-জন্তু।
মুভিটিতে সাইন্স ফিকশনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এক ভিন্ন মাত্রায়।২১৫৪ সালের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে এখানে। ছবির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটবর্তি নক্ষত্র আলফা সেন্টুরাইয়ের কক্ষপথে অবস্থান করা পলিফেমাস গ্রহের জঙ্গলে পরিপূর্ণ তিনটা উপগ্রহের একটা, প্যান্ডোরা,যেটা হচ্ছে পৃথিবী থেকে ৪.৩ আলোকবর্ষ দূরে।প্যান্ডোরাতে এমন একটা মৌলিক পদার্থ,ইউনেবটিয়াম আছে যা পৃথিবীতে এনে বিক্রি করতে পারলে অনেক লাভবান হওয়া যাবে। আর সে লালসার কারনেই মানুষ সেখানে যায় অত্যাধুনিক সামরিক বহর নিয়ে যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ তীর ধনুক হাতে স্থানীয় না'ভি জাতি।
যে মৌলের লোভে মানুষ সেখানে গিয়েছিল সে মৌল ছিল না'ভিদের গ্রামের ঠিক নিচে। ফলে তাদের উচ্ছেদ করাটা জরুরী ছিল। আর উচ্ছেদ করতে গিয়ে মানুষ একটা সমাধান বের করে। মানুষ এবং না'ভি জাতির জিনের সমন্বয়ে এক ধরনের এ্যাভাটার তৈরি করে যা একেকজন মানুষ নিয়ন্ত্রন করে,যেটা কিনা দেখতে না’ভিদের মতোই।আর এভাবেই শুরু হয় সিনেমার কাহিনী। ইয়াহুতে যে এ্যাভাটার ব্যবহার হয় তার এর ধারনাটা একই যেখানে পিছন থেকে একজন মানুষ নিয়ন্ত্রন করে। ধীরে ধীরে যখন একটা সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা হয় তখন মারা যায় একজন বিজ্ঞানী যারা এ্যাভাটার তৈরি হচ্ছিল প্যান্ডোরাতে। মূলত জেনিটিক কোডিং এ মিল থাকার কারনে তার জায়গায় পাঠানো হয় তার পঙ্গু জমজ ভাই মেরিন অফিসারকে।
তার যখন এ্যাভাটার তৈরি হয় তখন তাকে ট্রেনিং দেওয়ার জন্য নেওয়া হয় প্যান্ডোরাতে একপর্যায়ে সেখানে সে হারিয়ে যায়। শুরু হয় তার নতুন যুদ্ধ একসময় তার দেখা সেখানকার এক মেয়ে,নায়িত্রীর সাথে।তার সাহায্যেই সে না'ভিদের দলে স্থান পায়। গল্পটা এখানেই শুরু। জ্যাককে দিয়ে মানুষ জয় করতে চায় প্যান্ডোরা কিন্তু সেই জ্যাকই শুরু করে মানুষদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। শুরু হয় দুই অসম প্রতিপক্ষের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে কে জয়ী হবে?
১৯৯৪ সালে ৮০ পৃষ্ঠার পূর্ণাংগ এক কাহিনীচিত্র,এভাটার লিখার মাধ্যমে ছবির কাজ শুরু করেছিলেন পরিচালক,কথা ছিল টাইটানিকের কাজ শেষ হবার পরই এটির কাজ শুরু করবেন তিনি।কিন্তু অত্যাধিক ব্যয় এবং প্রযুক্তির অপ্রতুলতার জন্য তখন থেমে যেতে হয় তাকে।এরপর ২০০৫ সালে এসে অফিশিয়ালি কাজ শুরুর ঘোষনা দেন ক্যামেরুন।আর তারপরের কাহিনী কি হলো তা তো আপনিই জানেন!

পরিচালকঃ জেমস ক্যামেরন
মিউজিকঃ জেমস হোর্নার
রিলিজঃ ১৮ ডিসেম্বর ২০০৯
ধরণঃ একশন,এডভেঞ্চার, সাই-ফাই,
অভিনয়ঃ স্যাম অর্থিংটন,জোয়ি স্যাল্ডানা,সিগোর্নি ওয়েভার,স্টিফেন ল্যাং,জোয়েল মোরে
ব্যাপ্তিঃ ১৬২ মিনিট
বাজেটঃ ৩০০ মিলিয়ন ডলার(আনুমানিক)
আয়ঃ ২০৭০ মিলিয়ন ডলার(০৩ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত)
সাউন্ডঃ ডলবি ডিজিটাল,ডিটিএস
শ্যুটিং লোকেশনঃ হাওয়াই,আমেরিকা
কোম্পানিঃ টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্স
পুরষ্কারঃ সেরা ছবি আর পরিচালক ক্যাটাগরিতে গোল্ডেন গ্লোব সহ ১২টি পুরষ্কার,অস্কারে ৯ টি বিষয়ে নমিনেশন।

No comments:

Post a Comment