February 11, 2010

আ্সছে প্রযুক্তিঃ এল.ই.ডি টেলিভিশন

এইতো সেদিনো বসার ঘরের একটি বড় অংশ জুড়ে শোভা পেত সি আর টি (ক্যাথোড রে টিউব) টেলিভিশন এগুলি যেমন ছিলো বড় আকৃতির তেমনি ছিলো ভারী । তার পর আসলো এল সি ডি ঘরানার প্লাজমা টেলিভিশন। সি আর টি টেলিভিশনের পর এল সি ডি টেলিভিশন আসতে বেশ সময় নিলেও প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় যুগ শেষ হতে না হতেই প্লাজমা টিভির স্থান দখল করতে আসছে আরেক এল সি ডি টেলিভিশন এল ই ডি টেলিভিশন প্রিয় পাঠক গত সংখ্যায় আপনাদের স্ট্রীট ল্যাম্পে এল ই ডির একটি সফল ব্যবহার জানিয়েছিলাম চলুন আজ জেনে আসি এল ই ডি প্রযুক্তির টেলিভিশনের কথা।

প্রত্যেক এল সিডি টিভি ব্যাকলিট প্রযুক্তির ব্যাকলিট ব্যাপারটি বুঝতে একটি প্রশ্নের উত্তর দিন আপনি কি মুনলিট নাইট শব্দটির সাথে পরিচিত? উত্তরটা আমিই দিচ্ছি মুনলিট নাইট প্যারাগ্রাফ ছাত্র জীবনে লিখিনি এমন কেউ নিশ্চই নেই। চাঁদ মামার আলোয় আলোকিত রাতকে মুনলিট নাইট বলা হয়। এবার নিশ্চই সহজে বোঝা যাবে ব্যাকলিট কথাটি। হ্যাঁ প্রিয় পাঠক আপনি ঠিক ধরেছেন ব্যকলিট প্রযুক্তিতে স্ক্রীন এর পেছনে অবস্থিত কোন আলোক উৎস থেকে আরো ধার করে ইমেজ বা ফুটেজ আমাদের সামনে প্রকাশ করে। বর্তমান সময়ের বেশির ভাগ এল সি ডি টেলিভিশন সি সি এফ এল (কোল্ড ক্যাথোড ফ্লুরিসেন্ট ল্যাম্পস) ব্যাকলিট হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এ প্রযুক্তি ভালো মানের ডিসপ্লে ব্রাইটনেস ও কনট্রাস্ট দিতে সক্ষম হলেও বিভিন্ন কৌনিক দিক থেকে দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন এ প্রযুক্তি ভালো মানের কালো রং অর্থাৎ ডার্কনেস দিতে সক্ষম নয়। সাম্প্রতি এল সিডি তে এল ই ডি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভালো মানের কালো রং অর্থাৎ ডার্কনেস পাওয়া গেছে এছাড়াও ভালো ডিসপ্লে ব্রাইটনেস ও কনট্রাস্ট রেসিও পাওয়া গেছে (তোসিবা রেগজা ৫৫* ১এর রেসিও ৫০০০০০০ : ১) বিঃ দ্রঃ স্ক্রিনের ডিসপ্লে কনট্রাস্ট পরিমাপ করা হয় ডার্কেস্ট লিট জোন ও ব্রাইটেস্ট লিট জোন অনুপাতে। আপনার এল সি ডি মনিটরে লাগানো কোম্পানি স্টিকারে নিশ্চই এমন একটা অনুপাত লেখা আছে। আমি যে মনিটরের সামনে বসে লেখাটি লিখছি সেটার রেসিও ৮০০০ : ১।

তুলনার সুবিধার্থে চলুন পুরানো বন্ধু সি আর টি সম্পর্কে একটু জেনে নেই। সি আর টি প্রযুক্তিতে একটি মোচাকৃতি টিউবের মধ্যে ইন্টারনাল ইলেকট্রোস্ট্যাটিক ডিফ্লেকশান প্লেট ও যে দিকটা আমরা দেখি তার ঠিক পেছনে টিউবের মধ্যে ফসফর টার্গেট লেয়ার (সাদাকালো টিভির জন্য এক ধরনের লেয়ার ও রঙিন টিভির জন্য তিন ধরনের নীল, সবুজ ও লাল ফরফর লেয়ার থাকে) বসানো থাকে। টিউবের পেছনে অবস্থিত ইলেকট্রন গান হতে ভিডিও সিগনাল অনুযায়ী ইলেকট্রন নির্গত হয়ে ফসফর লেয়ারের উপর পড়লে তা জ্বলে ওঠে ও চিত্র তৈরি করে।

সিআরটির বিভিন্ন অংশঃ
1. Three Electron guns (for red, green, and blue phosphor dots)
2. Electron beams
3. Focusing coils
4. Deflection coils
5. Anode connection
6. Mask for separating beams for red, green, and blue part of displayed image
7. Phosphor layer with red, green, and blue zones
8. Close-up of the phosphor-coated inner side of the screen

যাহোক আমরা এল ই ডি টেলিভিশনে ফিরে আসি। প্রযুক্তিগত কারনে এল ই ডি টেলিভিশন কে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। (১) এডজ লিট (২) ম্যাট্রিক্স এল ই ডি । যারা ঢাকার রাজপথে চলা ফেরা করেন তারা হয়তো ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের উপরে অবস্থিত ও কাকরাইল মোড়ে রাজমণি সিনেমা হলের উপরে অবস্থিত দুটি বড় টিভি স্ক্রীন দেখে থাকবেন এগুলি কিন্তু এল ই ডি টেলিভিশন। না প্রিয় পাঠক হতাশ হবার কোন কারণ নেই আমি আপনাদের যে এল ই ডি টেলিভিশনের কথা বলছি তাতে এল ই ডি ব্যবহার করা হলেও উল্লেখিত টেলিভিশন গুলোর মত নয়। এগুলি অনেক দুর থেকে দেখার জন্য তৈরি করা হয়েছে। বড় বড় আউটার স্টেডিয়াম, রক ভেন্যু, শেয়ার মার্কেট, ডিসকো, বার ও ক্যাসিনোতে এগুলি বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে।

এডজ লাইটিং
এডজ লাইটিং প্রযুক্তির এল সি ডির রেজ্যুলেশন বর্ণনাতিত সুন্দর। এই সিস্টেমে একসারি এল ই ডি ব্যাকলিট হিসেবে স্ক্রীনের প্রান্ত বরাবর সাজানো থাকে। সেখান থেকে আলো স্ক্রীনের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এ ধরনের এল ই ডি বা এল সি ডি টিভি খুব পাতলা করে তৈরি করা সম্ভব হয়। এর রেজ্যুলেশন সি সি এফ এল প্রযুক্তির চেয়ে ভালো কারন এডজ লাইটিংয়ে স্ক্রীনের ব্লাক লেভেল অনেক গভীর আপনি আরও কাছ থেকে দেখলে দেখবেন স্ক্রীনের প্রান্তের চেয়ে মাঝখানের উজ্জ্বলতা কিছুটা কম। ফলে স্ক্রিনের কনট্রাস্ট রেসিও অনেক বেশি হয়।

ম্যাট্রিক্স এল ই ডি বা ফুল অ্যারে ব্যাক লাইটিং
এল ই ডি লাইটিং এর সম্পূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে কিছু কিছু ম্যানুফ্যাকচারার ফুল অ্যারে ব্যাক লাইটিং ব্যবহার করে থাকেন।যৈখানে অনেক সারি এল ই ডি স্ক্রীনের ঠিক নিচে সাজানো থাকে যদিও এর ফলে এডজ লাইটিং সমৃদ্ধ টিভির চেয়ে এটি বেশি পুরু করে তৈরি করতে হয়। তারপরও এর ব্রাইটনেস ও কণ্ট্রস আপনাকে টিভির পুরুত্বের কথা ভুলিয়ে দেবে। ফুল অ্যারে ব্যাক লাইটিং প্রযুক্তির একটি বড় সুবিধা হল ডিসপ্লের লোকাল ডিমিং(আলো মৃদুকরণ) ব্যবহার করা যায়। এর ফলে সমগ্র ডিসপ্লের কণ্ট্রাস, ব্রাইটনেস ও ডার্কনেস সুনির্দিষ্টভাবে নিয়ন্ত্রন করা যায়। অত্যন্ত ভালো কণ্ট্রাস লেভেল পেতে এটি সাহায্য করে। এখানে উল্লেখ্য যে উজ্জ্বল ভাবে জ্বলতে থাকা আলোর কারণে এর পাশের অঞ্চল মৃদু আলোকিত হয়ে যায়। পদার্থ বিজ্ঞানে একে ব্যতিচার বলে। এডজ লাইটিং প্রযুক্তির এটিই একমাত্র সীমাবদ্ধতা। ইতি মধ্যে অনেক সংখ্যক ম্যানুফ্যাকচারার এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভাবনীয় সাফল্য বয়ে এনেছে। এদের মধ্যে স্যামসাং, তোসিবা, এল জি ও মেট্জ উল্লেখযোগ্য। কোয়ালিটি, ভালো কালার ডিপনেস এর দিক লক্ষ্য রাখতে গিয়ে সাদা এল ই ডি বেশি ব্যবহার হলেও অনেক ম্যানুফ্যাকচারার (আর জি বি) তথা লাল, সবুজ ও নীল রংয়ের এল ই ডি ব্যবহার করছেন। ম্যানুফ্যাকচারারগণ এতে করে আরও ভালো কালার রেজ্যুলেশনের ব্যপারে আশাবাদী।

এল ই ডি ব্যাকলিট এল সি ডি টিভির ফিচার সমূহঃ
* এল ই ডি টিভি গভীর কালো রংয়ের সমন্বয়ে তুলনামূলক ভাবে উজ্জ্বল ছবি নির্গত করে তথাপি খুব ভালো কণ্ট্রাস রেসিও তৈরি করে।
* এল ই ডি টিভি অপেক্ষকৃত পাতলা (এডজ এলইডি লাইপিং সিস্টেমে)
* অন্যান্য এল সিডির তুলনায় ভালো কৌনিক ভিউ প্রদর্শন করে।
* এল ই ডি সবমসয়ই দীর্ঘস্থায়ী।
* সি আর টি, প্লাজমা ও সি সি এফ এল প্রযুক্তির চেয়ে এল ই ডি টিভি অধিক এনার্জি সাশ্রয়ী।
* অন্যান্য ব্যাকলিট প্রযুক্তির মত এলইডি প্রযুক্তিতে মার্করী বা পারদ ব্যবহার করা হয় না ফলে এটির উৎপাদন পরিবেশ বান্ধব।

কতগুলি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এল ই ডি
OLED = Organic Light Emitting Diode/Device/Display
AM OLED = Active Matrix OLED device
FOLED = Flexible Organic Light Emitting Diode (UDC)
NOID = Neon Organic Iodine Diode (CDT)
PhOLED = Phosphorescent Organic Light Emitting Diode (UDC)
PLED = Polymer Light Emitting Diode (CDT)
PM OLED = Passive Matrix OLED device
POLED = Patternable organic light-emitting device
RCOLED = Resonant Color Organic Light Emitting Diode
SmOLED = Small Molecule Organic Light Emitting Diode (Kodak)
SOLED = Stacked Organic Light Emitting Diode (UDC)
TOLED = Transparent Organic Light Emitting Diode (UDC)

পরিশেষে বলা যায় শুধু সময়ের চাহিদা মেটাতে নয় বরং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে স্বাগত জানাতে আপনার সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে আপনিও একটি এল ই ডি টিভির মালিক হয়ে যান।

প্রথম প্রকাশঃ টেকনোলজি টুডে নভেম্বর ২০০৯

No comments:

Post a Comment