February 9, 2010

আইপ্যাড রিভিউঃ ডিজাইন,ফিচার এবং টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন

দীর্ঘ এক বছরের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে গত জানুয়ারির ২৭ তারিখে সানফ্রন্সিসকোতে ‘অবিশ্বাস্য মূল্যে জাদুকরী ও বৈপ্লবিক ডিভাইস’ থিম কে সামনে রেখে এপলের আইপ্যাড-এর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। খুব সহজ কথায় বলতে গেলে এটি একটি বড় মাপের আইপড, ল্যাপটপ আর স্মার্টফোনের মধ্যবর্তী দূরত্ব ঘোঁচানোটাই আইপ্যাডের মূল উদ্দেশ্য।আইপ্যাডে ওয়েব ব্রাউজিং, ইমেইল পাঠানো, পিকচার শো, ভিডিও দেখা, গান শোনা, গেম খেলা, ইবুক পড়া ছাড়াও আরো অনেক কিছু করা যাবে। এর রয়েছে উচ্চ রেজ্যুলেশনের ৯.৭ ইঞ্চি মাপের এল ই ডি ব্যাকলিট ও আইপিএস (ইন প্লেন সুইচিং)প্রযুক্তির আল্ট্রা-ওয়াইড (১৭৮ ডিগ্রী ভিউইং এ্যাঙ্গেল) মাল্টিটাচ ডিসপ্লে স্ক্রিন, এটি বাজারে প্রচলিত যে কোন নেটবুক ল্যাপটপের চেয়ে হালকা পাতলা।
নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনে এপলের জুড়ি মেলা ভার।সেই কম্পিউটিং প্রজন্মের শুরু থেকেই একের পর এক তাকলাগানো পণ্য দিয়ে কম্পিউটার বোদ্ধাদের প্রসংশা কুড়িয়ে আসছে এপল।ম্যাক পিসি,ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম থেকে শুরু করে হালের আইপড কিংবা আইফোন,সবসময়ই এপল পণ্যের আকর্ষণটা একটু অন্যরকম।দাম হয়তো কিছুটা বেশি কিন্তু গুণে-মাণে এপলের ধারেকাছে কেউ নেই।

সেই এপলই এবার ঘোষণা দিল আইপ্যাড নামের ট্যাবলেট পিসির,যার পুরোটাই টাচ ইন্টারফেস বিশিষ্ট।সেই ২০০১ সালে মাইক্রোসফট প্রথম পেন-এনাবেল টাচ স্ক্রীণ ট্যাবলেট পিসির ঘোষণা দিলেও তা তেমন বাজার পাইনি।এরপর আই ফোন বাজারে আসার পর থেকেই গুজব চলছিল যে এপল বড় আকৃতির টাচ স্ক্রীণ বিশিষ্ট ট্যাবলেট পিসি বা নেটবুক বাজারে আনছে যার নাম হতে পারে আই স্লেট।অবশেষে গত ২৭ জানুয়ারী স্টিভ জবস আনুষ্ঠানিকভাবে এর ঘোষণা দেন।


এপলের পণ্য মানেই নতুন কিছু,নতুন প্রযুক্তি,নতুন চমক।আইপ্যাডও তার ব্যতিক্রম নয়। আসুন আগে এক নজরে দেখে নিই এর প্রধান ফিচারসমূহ-
১. ওয়েব ব্রাউজিং- বিশাল মাল্টিটাচ স্ক্রীণে ইন্টারনেট ব্রাউজিং আপনার এতো বছরের ব্রাউজিং-এর পরিচিত অভিজ্ঞতাকে অনেকটাই বদলে দেবে।শুধুমাত্র হাতের স্পর্শেই এখন থেকে সব করতে পারবেন আপনি।ল্যান্ডস্কেপ কিংবা পোট্রেট যেভাবেই আইপ্যাডকে রাখুন এটি নিজের থেকেই স্ক্রীণকে সেভাবে ওয়েবসাইটের পেজের আকার বুঝে পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম।

২.ই-মেইল- জনপ্রিয় সব ই-মেইল সার্ভিস প্রোভাইডরের সেবাই আপনি পাবেন আইপ্যাডে।মেইল লিখার জন্য আছে অনস্ক্রীণ ফুল কীবোর্ড সুবিধা।আর আইপ্যাডের ইন্টিলিজেন্ট ভার্চুয়াল কীবোর্ডকে প্রায় ট্রেডিশনাল কীবোর্ডের রূপ দেওয়া হয়েছে।সুতরাং মেইল লিখতে আপনাকে কোন বেগ পেতে হবে না।

৩. ফটো ভিউয়ার

৪. ভিডিও প্লেয়ার- হাই ডেফিনেশন ভিডিও প্লে ব্যাক সুবিধা আছে এতে।
৫. ইউটিউব- ইউটিউব ভিডিও চালানোর জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে আইপ্যাডে।

৬. আইবুক- এটিকে চাইলে খুব সহজেই আপনি ই-বুক রীডার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।বিল্ট-ইন এপল বুক স্টোর থেকে বই সরাসরি কেনার অপশনও আছে এতে।

৭. আইপড- এ সম্পর্কে আর কিছু না বলি!!

৮. আইটিউন
৯. ক্যালেন্ডার

১০. কন্টাক্ট অর্গানাইজার

১১. ম্যাপ সার্ভিস

১১. নোটস

১২. স্পট লাইট সার্চ

১৩. এপ্লিকেশন স্টোর- আইপ্যাডে ১২ টি নতুন স্পেশাল এপ্লিকেশান ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া এ্যাপল নির্মিত এপ্লিকেশান স্টোরের প্রায় ১৪০,০০০ এপ্লিকেশান চালাতে সক্ষম। প্রতিটি এপ্লিকেশান পোট্রেট ও ল্যান্ডস্কেপ দুভাবেই কাজ করে।
এপলের আইফোন, আইপড টাচ, আইটিউনস্ এর জন্য নির্মিত সকল এপ্লিকেশান (১১ মিলিয়ন গান, ৫০,০০০ টিভি সিরিয়াল, ৮,০০০ মুভি, ২,০০০ বিভিন্ন ভিডিও, অসংখ্য আইবুক কনটেন্টস) এতে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া প্রতিটি ৯.৯৯ মার্কিন ডলার মূল্যের পেজেস, কী-নোট, নাম্বারস নামের আইওয়ার্ক আইপ্যাডে ব্যবহার করে ডকুমেন্ট, প্রেজেন্টেশান, এ্যানিমেশান এন্ড ট্রানজিশান, চার্ট সহ স্প্রেড শীট, বিভিন্ন ফাংশান এবং ফর্মুলা তৈরি করা যাবে।

ডিজাইন

ফিচারের পরই চলে আসে আইপ্যাডের মনোমুগ্ধকর ডিজাইনের কথা।ডিজাইনে নতুনত্ব এপলের প্রাচীন ঐতিহ্য।আইপ্যাডও তার ব্যতিক্রম নয়।আগে এর ডিজাইনের মূল ফিচারসমূহ-এর দিকে একনজরে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক-
>> ডিসপ্লে- সন্দেহ নেই ৯.৭ ইঞ্চির হাই রেজুলেশন মাল্টিটাচবিশিষ্ট এলইডি-ব্যাকলিট আইপিএস ডিসপ্লেটিই আইপ্যাডের প্রাণ।এর অসাধারণ কালার রেজুলেশন একে করেছে হাই ডেফিনেশন মুভি কিংবা ওয়েব ব্রাউজিং-এর জন্য আদর্শ।রয়েছে মোশন সেন্সর টেকনোলজি।ইউজার আইপ্যাডকে যেদিকেই ঘোরাক না কেন এটির ডিসপ্লে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ইউজারের দিকে ঘুরে যাবে। এর ভিউয়িং এঙ্গেল হচ্ছে ১৭৮ ডিগ্রী।
>> মাল্টিটাচ- আইফোন দিয়ে মাল্টিটাচ টেকনোলজির জগতে আলোড়ন ফেলেছিল এপল।এবার তাই পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে আইপ্যাডের বিশাল স্ক্রীণের মাধ্যমে।এখন থেকে আপনি খুব স্বাচ্ছন্দের সাথেই একই মুহুর্তে একাধিক স্পর্শের মাধ্যমে যেকোন কাজ আগের চেয়ে দ্রুতগতিতে করতে সক্ষম হবেন।

>> স্লিম এন্ড লাইট- এপল পণ্যের একটি বৈশিষ্টই এটি।পাতলা এবং হালকা।চন্তা ক্রএ দেখুন এই অসম্ভব শক্তিশালী ন্ত্রটি আপনার মোবাইলের চেয়েও পাতলা,মাত্র আধা ইঞ্ছি!আর ওজন?দেড় পাউন্ড মাত্র।আর আকারে আমরা সচরাচর যেসব ম্যাগাজিন পত্রিকা দেখে থাকি তার চেয়ে একটু ছোট আকৃতির এই আইপ্যাড।
>> দীর্ঘ ব্যাটারীলাইফ- ১০ ঘণ্টার ব্যাটারি লাইফ এবং ৩০ দিনের স্টান্ডবাই।আর কি বলব?যেখানে আমাদের মোবাইলই এই লেভেলে যায়নি আজো সেখানে একটি ট্যাবলেট পিসিতে এতো মহাশক্তিশালী ব্যাটারী?এপলের ইঞ্জিনিয়াররা খুব বেশি স্পেশাল একটা ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা পেতেই পারেন আমাদের কাছ থেকে। অ্যাডভান্স কেমিস্ট্রি এবং এডাপ্টিং চার্জিং টেকনোলজি টানা ৫ বছর কিছুমাত্র না কমিয়ে ব্যাটারিকে ১০০০ চার্জ সাইকেল দিতে সক্ষম।


টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন
এই যে এতো এতো ফিচার আর মনমাতানো ডিজাইন,এর সবকিছুর পেছনেই কিন্তু রয়েছে আইপ্যাডের নেক্সট জেনারেশন হার্ডওয়ার স্পেসিফিকেশন।বিস্তারিত বলার আগে একনজরে আগে দেখে নিই এর টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন-
*১ গিগাহার্জ এপল ১ফোর প্রসেসর
*১৬-৬৪ গিগাবাইট ইন্টারনাল ফ্লাশ মেমোরি
*৯.৭’’ আইপিএস ডিসপ্লে
* ফুল ক্যাপাসিটিভ মাল্টিটাচ ডিসপ্লে
* ১০ ঘন্টা ব্যাটারী লাইফ(১ মাস স্ট্যান্ডবাই টাইম)
*বিল্ট ইন এক্সেলারোমিটার সেন্সর এবং ডিজিটাল কম্পাস
*স্পীকার,মাইক্রোফোন এবং ৩০ পিন কানেক্টর
* ব্লুটুথ ২.১
* ওয়াই-ফাই ৮০২.১১এন
* আধা ইঞ্চি পুরুত্ব এবং দেড় পাউন্ড

প্রথমেই চলে আসবে প্রসেসরের কথা।আইপ্যাডের প্রাণভোমরা হচ্ছে এপলের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ১ গিগাহার্জ গতিসম্পন্ন এফোর প্রসেসর।এটি একইসাথে যেমন গতিসম্পন্ন তেমনি বিদ্যুত সাশ্রয়ী।নতুবা ১০ ঘন্টা ব্যাটারীলাইফ অসম্ভব ছিল।গেমিং থেকে শুরু করে হাই ডেফিনেশন ভিডিও প্রসেসিং-সবখানেই দূরন্ত গতি পাবেন আপনি।

ডিসপ্লে সম্পর্কে আগেই বলেছি এবারে বলব এর ওয়ারলেস কানেক্টিভিটির কথা।এতে থাকছে ৮০২.১১এন ওয়াই-ফাই কানেকশন যা কিনা ৩০০ এমবিপিএস গতিতে ইন্টারনেটে ডাটা আদা-প্রদানে সক্ষম।এর ব্লুটুথ ২.১ আর ইডিআর এর মাধ্যমে আপনি ওয়ারলেস হেডফোন কিংবা কিবোর্ড/মাউস লাগিয়ে স্বাচ্ছন্দের সাথেই ব্যবহার করতে পারবেন।আর এর থ্রিজি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ৭.২ এমবিপিএস গতিতে ডাটা ট্রান্সফার করা সম্ভব।

আইপ্যাডকে ম্যাক, পিসি বা ডিজিটাল ক্যামেরার সাথে সংযুক্ত করা যাবে।এই সব কাজ আপনি একত্রে সারতে পারবেন এতে থাকা ৩০ পিন মাল্টি-কানেক্টরের মাধ্যমে।


আইপ্যাডকে পরিবেশ বান্ধব করে তৈরী করা হয়েছে এর কেসিং রিসাইকেলএ্যাবল অ্যালুমিনিয়ামের তৈরী। ব্যাকলিট হিসাবে ব্যবহার করা এলইডি মার্কারী মুক্ত এবং ডিসপ্লে গ্লাস আর্সেনিক মুক্ত। আইপ্যাডে ব্রোমিনেটেড ফ্লেম রিটারড্যান্টস (অগ্নি শিখা ঠেকানো) ব্যবহার করা হয়নি এবং সম্পূর্ণ পিভিসি (পলি ভিনাইল ক্লোরাইড) মুক্ত।

আইপ্যাড বাজারে আসছে দুটি ভার্সন নিয়ে একটি শুধু ওয়াইফাই সহ এবং আরেকটি ওয়াইফাই ও থ্রিজি। এ বছর মার্চের শেষ দিকে এ্যপলের এ ডিভাইসটি পৃথিবীর প্রায় সব দেশে ৪৯৯ থেকে ৮২৯ মার্কিন ডলার মূল্যে একযোগে পাওয়া যাবে।

No comments:

Post a Comment